শিক্ষা, শিক্ষা শব্দের উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য

মু. মিজানুর রহমান মিজান

0 548

শিক্ষা শব্দের উৎপত্তি

বাংলা ভাষার একটি শব্দ হলো শিক্ষা। এই শিক্ষা শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত ‘শাস্‌’ ধাতু থেকে। শাস্‌’র অর্থ শাসন করা, নিয়ন্ত্রণ করা, নির্দেশদান, উপদেশদান ইত্যাদি। শিক্ষা শব্দের পাশাপাশি আমাদের আরেকটি শব্দ এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সে শব্দটি ‘বিদ্যা’। সংস্কৃত এ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ‘বিদ্‌’ থেকে, যার অর্থ- জানা। জানার অর্থ হলো কোনো কিছু সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা অর্থে শিক্ষালাভ করা।

সাধারণ অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্য-

মানুষ যা শেখে বা জানে তার নামই শিক্ষা
কেউ অশিক্ষিত নয়

ব্যাপক অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্য

প্রত্যেকেই শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত কেউ নেই।
শিক্ষা আচরণগত পরিবর্তন আনে।
শিক্ষা হলো একটি মানবীয় প্রচেষ্টার ফল।
শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া।
শিক্ষা হলো নির্দেশনার সমষ্টি।
শিক্ষা হয়ে থাকে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যনির্ভর।
শিক্ষা একটি সামাজিক ও মনোসামাজিক প্রক্রিয়া।

বিশেষ বা সংকীর্ণ বা সীমিত অর্থে শিক্ষার কতগুলো বৈশিষ্ট্য-

শিক্ষা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা।
শিক্ষা হলো একটি কাঠামো ও স্তর ভিত্তিক প্রক্রিয়া।
শিক্ষা হলো সুপরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যভিত্তিক প্রক্রিয়া।
শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে থাকে দেশের সরকারি বা প্রশাসনিক দিকনির্দেশনা অনুযায়ী।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষক নিয়োজিত থাকেন।

কয়েকজন শিক্ষাবিদের মতে শিক্ষার সংজ্ঞা

প্লেটো শিক্ষাকে সনাক্ত করেছেন ন্যায় বিচার অর্জনের উপায় হিসেবে। তিনি বলেছেন, “শিক্ষা হলো ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ন্যায়বিচার উভয়ই অর্জনের উপায়”। শিক্ষা সামাজিক ন্যায়বিচারের উপায় হলেও সামাজিক সাফল্যের মাধ্যম নয় বরং এটি এমন একটি পথ যা সত্যের কাছে পৌঁছে দেয়”।

অ্যারিস্টটল বলেছেন, “সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরির নামই শিক্ষা”।

জন ডিউই How We Think বইয়ে লিখেছেন, শিক্ষা হলো জীবনযাপনের প্রক্রিয়া তবে ভবিষ্যতে জীবনযাপনের প্রস্তুতি নয়।

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র বলেন, শিক্ষা কোনো ব্যক্তিকে পরিবর্তন করে পরীক্ষানিরীক্ষা করে মিথ্যা থেকে সত্য, অবাস্তব থেকে বাস্তব, কল্পনা থেকে প্রকৃতকে আলাদা করতে সক্ষম করে তোলে।

এফ. জে. ব্রাউন শিক্ষা সম্পর্কে বলেন, “শিক্ষা এমন একটি প্রক্রিয়া যা কারো জন্ম থেকে শুরু হয়ে জীবনব্যাপী চলতে থাকে। শিক্ষাই জীবন, পুরোটা জীবনই শিক্ষা”।

বি. এফ. স্কিনার বলেছেন, “শিক্ষা মানে বৃদ্ধি আর বৃদ্ধি মানে হলো বহুমুখী বিকাশ”।

জোহান হেইনরিখ পেস্তালতজির মতে, “শিক্ষা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তির স্বাভাবিক, সুষম ও প্রগতিশীল বিকাশ”।

জন ফ্রেডারিক হার্বার্ট বলেছেন, “মানুষের নৈতিক চরিত্রের বিকাশ সাধন হলো শিক্ষা”।

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “শিক্ষা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত মহত্বের বিকাশ”।

শিক্ষার সাংস্কৃতিক লক্ষ্যের উদ্দেশ্যসমূহ

সাংস্কৃতিক জ্ঞান অর্জন
সাংস্কৃতিক কুসংস্কার দূরীকরণ
ব্যক্তিকে মার্জিত ও রুচিশীল করা
সাংস্কৃতিক রীতিনীতির বিকাশ
সংস্কৃতির কল্যাণকর ও ইতিবাচক দিকগুলোকে ধারণ করা
সংস্কৃতির অকল্যাণকর ও নেতিবাচক দিকগুলোকে বর্জন

শিক্ষার নৈতিক চরিত্র গঠমূলক লক্ষ্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্য

উচ্চতর মূলবোধ অর্জন ও চর্চা
মনোবৃত্তি ও ইচ্ছাশক্তির বিকাশ
সুশৃঙ্খল মনোভাব
সার্বিক নৈতিক আচরণের উন্নতি

শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে যে সব উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব

দেহের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটানো
সুস্থ দেহ ও সুস্থ দেহে সুস্থ্ মনের সৃষ্টি করা
আত্মোপলব্ধি ও আত্মপ্রকাশের দক্ষতা বৃদ্ধি করা
আত্মিক বিকাশ ঘটানো
অন্তর্নিহিত ক্ষমতার বিকাশ ঘটানো
উচ্চতর আদর্শ জাগ্রত করা
নিজেকে জানার দক্ষতা বৃদ্ধি করা
আত্মবিশ্বাসী করা
চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করা
ব্যক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীন হিসেবে গড়া

শিক্ষার জীবনধারামূলক লক্ষ্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্য

জীবনযাপনের সঠিক পদ্ধতি রপ্ত করা
পরিবর্তনশীল ও বিকাশমান সমাজপদ্ধতির সাথে মানিয়ে নেওয়া
সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখা

(উৎসঃ লেখকের মূল লেখা থেকে সংক্ষেপিত অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।)

মন্তব্য করুন।

আপনার মেইল প্রকাশিত হবে না।