চলনবিলে ৪ লাখ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন সম্ভব

0 118

রান্না করার সময় বিশেষত লাকড়ি ও খড়কুটো দিয়ে রান্না করায় চুলার ধোঁয়া থেকে রোগে আক্রান্ত হয়ে নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য ও মৃত্যুঝুঁকি বেড়েই চলেছে। এ ঝুঁকি এখন সবচেয়ে বেশি দেখা যায় প্রত্যন্ত জনপদ চলনবিল অঞ্চলে। অবস্থার উত্তরণে ধোঁয়াবিহীন রান্নায় এই অঞ্চলে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন এখন সময়ের দাবি।

বায়োগ্যাস প্রাপ্তির প্রধান কাঁচামাল গোবর সবচেয়ে অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় চলনবিল এলাকায়, যার সিংহভাগ অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হয়। এবং বৃষ্টির মাধ্যমে তা পানিতে মিশে পানি দূষণ ঘটায়। পাবনা জেলার ফরিদপুর, ভাংগুড়া ও চাটমোহর উপজেলা; সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলার অংশবিশেষ এবং নাটোর জেলার সিংড়া. গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রামসহ মোট ৯টি উপজেলা নিয়ে চলনবিল অঞ্চল গঠিত।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের সূত্রমতে জানা যায়, চলনবিলের ৯ উপজেলায় মোট গরুর সংখ্যা ১০ লাখ ১৯ হাজার ৪৯৩ এবং মহিষের সংখ্যা মোট ২৩ হাজার ১৬৫। গড়ে প্রতিটি গরু ২০ কেজি আর মহিষ দেয় গড়ে ৩০ কেজি গোবর। এতে, মোট গরু ও মহিষ প্রতিদিন দেয় মোট প্রায় ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯৯৩ মণ গোবর। এর খুব সামান্য অংশ ঘুটে ও সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সিংহভাগ গোবরই নষ্ট হয়ে যায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিফিক অফিসার আসাদুজ্জামান সুজন বলেন, লাকড়ির চুলার ধোঁয়া থেকে রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতি ১৩ সেকেন্ডে একজন গৃহবধূ এবং প্রতি ৩৩ সেকেন্ডে একজন শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে (দ্বিতীয় পর্যায়) ২০১৬ সালে দেশের ১৫টি জেলার ৫ হাজার পরিবারে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছিল।

বায়োগ্যাস এর সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, পারিবারিকভাবে রান্নায় প্রতিটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে প্রতিদিন ৪০ কেজি হারে গোবরের প্রয়োজন হয়। ব্যবহৃত গোবরের বাইপ্রোডাক্ট জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে প্রতি ৫ হাজার বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের মাধ্যমে প্রতি বছর ৭৫ হাজার ৩৭১ দশমিক ৪৮ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হ্রাস পাবে।

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া এতে ১ লাখ ৮০ হাজার মণ (লাকড়ি) জ্বালানি সাশ্রয় হবে। সেই হিসাবে চলনবিল এলাকায় অন্তত ৪ লাখ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্হাপন করা সম্ভব। আর এর মাধ্যমে বছরে মোট প্রায় ৭৫ লাখ ২১ টন কার্বন নির্গমন হ্রাস পাবে। সাশ্রয় হবে বছরে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মণ লাকড়ি। রক্ষা পাবে বিপুল পরিমাণ বৃক্ষরাজি। সমৃদ্ধ হবে অক্সিজেনের ভান্ডার ও ইকো সিস্টেম।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার দেশের সব উপজেলায় বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট (তৃতীয় পর্যায়) স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

এ ব্যাপারে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও যুব সংগঠনের পরিচালক আব্দুল হামিদ খান বলেন, প্রতিটি উপজেলার আগ্রহী কৃষক স্থানীয় যুব উন্নয়ন অফিসের মাধ্যমে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে আবেদন করে এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনে সব ধরনের সহায়তা নিতে পারবেন।

চলনবিল এটি করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোন বিশেষ সহায়তা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলনবিলের জন্য বিশেষভাবে কোনো বরাদ্দ নেই। তবে বায়োগ্যাসের জন্য কাঁচামাল যে এলাকায় বেশি, সেই এলাকার কৃষকেরা বেশিসংখ্যক এই প্ল্যান্ট স্থাপনে সহয়তা পাবেন।

মন্তব্য করুন।

আপনার মেইল প্রকাশিত হবে না।