দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তোলা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ দুদকের

0 154

বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম। টানা তিন মেয়াদে এই পদে রয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে সদরের কাগাশুরা মাধমিক বিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের সহকারী শিক্ষকের পদেও রয়েছেন। গত ১২ বছর ধরে উভয় পদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও বেতন-ভাতা ভোগ করে আসছেন এই নারী।

একই সঙ্গে দুই পদে থেকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা স্থানীয় সরকার আইনের পরিপন্থি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কেন্দ্রীয় দপ্তরে সুপারিশ করেছে দুদকের বরিশাল কর্তৃপক্ষ।

বরিশাল দুদকের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল লতিফ হাওলাদার সম্প্রতি ভাইস চেয়ারম্যান রেহানার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং শিক্ষক হিসেবে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে অনৈতিকভাবে সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করায় তার বিরুদ্ধে দুটি মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে ভাইস চেয়ারমান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা নিচ্ছিলেন রেহানা বেগম। তার বিরুদ্ধে দুদক তৎপর হওয়ার পর এক বছর আগে তিনি উপজেলা পরিষদের সম্মানী নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাকে দু’বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন সদর ইউএনও। কিন্তু কোনো জবাব দেননি রেহানা বেগম।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য রেহানা বেগম ২০০৮ সালের ১৭ নভেম্বর কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদ থেকে এক বছরের জন্য ছুটি নেন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে ভাইস চেয়ানম্যান নির্বাচিত হলে তিনি ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ২০১১ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত দুই বছর বিনা বেতনে ছুটি মঞ্জুর করান। তবে তিনি দুই বছরে বিদ্যালয় থেকে দুই লাখ ১৪ হাজার ৫৯৬ টাকা বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। ভাইস চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায়ই রেহানা বেগম ২০১১ সালের ২৮ জুলাই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের উপজেলা নির্বাচনেও তিনি ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি বিদ্যালয়ের বেতন-ভাতা এবং উপজেলা পরিষদের সম্মানী ভোগ করেন।
দুদকের তদন্তে জানা গেছে, ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম বিদ্যালয় থেকে বেতন-ভাতা বাবদ ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ১৭৩ টাকা এবং ২০১১-২০১৯ সাল পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে সম্মানী হিসাবে ১৯ লাখ ২০ হাজার ৪৬৮ টাকা উত্তোলন করেন।

সদর ইউএনও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, রেহানা বেগম গত এক বছর ধরে উপজেলা পরিষদ থেকে সম্মানী নিচ্ছেন না। সদ্য বিদায়ী ইউএনও মুনিবুর রহমান এ বিষয়ে ভাইস চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও তিনি জবাব দেননি। তিনি আরও বলেন, ‘সবশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় আমিও সম্মানী না নেওয়ার কারণ জানতে চাই। এ সময় ভাইস চেয়ারম্যান জানান তিনি আর সম্মানী নেবেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এক মাসের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

অভিযুক্ত রেহানা বেগমের মোবাইলে কল দিয়ে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা ভোগের প্রসঙ্গ তুলতেই ‘আমি ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব’ বলেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি বৈধভাবেই দুই জায়গা থেকেই বেতন নিচ্ছি।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে আইনত বাধা নেই। তবে শিক্ষকরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিনা বেতনে ছুটি ভোগ করতে হবে।’

মন্তব্য করুন।

আপনার মেইল প্রকাশিত হবে না।