খেজুর গাছে চাচা-ভাতিজার লাখ টাকার স্বপ্ন

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি,

0 67

মীরসরাইয়ে সর্ব দক্ষিণ জনপদ বালিয়াদি-বগাচতর এলাকায় প্রতি বছর শীতে দুই চাচা এক ভাতিজার লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন থাকে। আর এ স্বপ্ন পূরণের মাধ্যম খেজুর গাছ।

শীতের মৌসুম এলেই ধানচাল সহ অন্যান্য কাজ আগেভাগে সেরে বা কাজের রুটিন ভাগ করে প্রতি বছর ওরা খেজুর গাছ কাটেন। এ থেকেই জনপ্রতি আয় করে লাখ টাকা।

বগাচতর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আলী আজম (৪২) বলে আমার বড় ভাই মাহবুব আলম (৫২) ও কাকা আমজাদ হোসেন (৪৫) তিনজন মিলে আমরা প্রায় ১১০টি খেজুর গাছে হাঁড়ি বসাই প্রতি বছর। ২৪ হাজার টাকা খাজনা দিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর এই খেজুর গাছগুলো শীতের শুরুতে তৈরি করি।

রোববার (১৯ ডিসেম্বর) বিকালে গাছগুলো তখন তৈরি করছিল হাড়ি বসানোর জন্য। গাছের মাথায় গাছের ছাল আর ডালপালা ছেঁটে এখন থালি তৈরি করার সময়। আর কয়েকদিনের মধ্যেই রস নামতে শুরু করবে। প্রায় দুই মাস চলবে এই রসের মেলা।

গাছী আলী আজম বলেন, প্রতিদিন গড়ে ২১০- ২৫০ লিটার রস পাই এইসব গাছ থেকে। কখনো ৩০০ লিটার পর্যন্ত। অনেকে এখানে এসেই রস নিয়ে যায়। কখনো আমরা চট্টগ্রাম শহরে ও চালান করে থাকি। প্রতি লিটার রস ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার রস বিক্রি হয়। খরচ গিয়ে অর্ধেকের মতোই লাভ থাকে। এতে প্রতি মৌসুমে লাখ টাকা করে বাড়তি আয় হয় আমাদের।

বছরের অন্যান্য সময় কি কাজ করেন জানতে চাইলে অপর গাছী মাহবুব আলম ( ৫২) বলেন, আমরা সাধারণত: প্রান্তিক কৃষক। নিজের জমি আর বর্গা জমি চাষ করে থাকি। পাশাপাশি মৌসুমি সবজি, ধান, ইত্যাদি চাষাবাদ করি। খেজুর গাছে আমাদের বছরের মৌসুমি বাড়তি রোজগার।

প্রায় ১৮ বছর ধরেই চাচা ভাতিজার টিম এভাবে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করছেন। চাচা ভাতিজা তিনজনই জানায় এখন আগের থেকে অনেক সচ্ছল। খেজুর রসের বাড়তি টাকায় ভাঙ্গা একচালা থাকার ঘর ভেঙ্গে সবাই দোচালা টিনের ঘরেই থাকছে, আবার পরিবারের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছে। সবার স্বপ্ন সন্তানরা আরও বড় কিছু হয়ে পরিবারের বাকি অভাব ও মুছে দিবে।

তবে আশংকার কথা হলো এই কৃষকদের সুদিন আবার দুর্দিনে রূপ নেয় কিনা। এই বেড়িবাঁধ যদি কখনো সরকার মেরিন ড্রাইভ সড়ক করা শুরু করলে হারিয়ে যাবে এই রসের হাড়ির উৎস। হারিয়ে যাবে ওদের বাড়তি আয়ের স্বপ্ন। আবার আগের দৈন্যদশায় পতিত হয় কিনা সেই আশংকা করছে সম্প্রতির বছরগুলোতে।

এই বিষয়ে মীরসরাইয়ের কৃষি সুপারভাইজার নুরুল আলম বলেন, এখন থেকে গ্রামের অন্যান্য সড়কে ওরা খেজুর গাছ রোপণ করে এই আশংকার লাঘব করতে পারে। সরকার এখন সব প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় আন্তরিক।

মন্তব্য করুন।

আপনার মেইল প্রকাশিত হবে না।