জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা নজরদারি!

0 38

 

অনলাইনে ফাঁস হয়েছে পেন্টাগনের গোপনীয় তথ্য! আর এ তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রাশিয়ার স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

আর এসব তথ্য থেকে ধারণা করা যায় যে গুতেরেসের ওপর নজর রাখছে ওয়াশিংটন। বেশ কিছু দলিলে জাতিসঙ্ঘের প্রধানের সাথে তার ডেপুটি কর্মকর্তার একান্ত কথাবার্তার বিবরণও তুলে ধরা হয়েছে।

এটিই যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য-ফাঁসের সর্বশেষ ঘটনা। কীভাবে আর কোন সূত্রে পেন্টাগনের এই গোপন রিপোর্ট ফাঁস হলো, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তা এখন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

গুতেরেস বিভিন্ন সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বেশ কিছু সংখ্যক আফ্রিকান নেতা সম্পর্কে ঘরোয়া আলোচনায় যেসব মন্তব্য করেছেন, ফাঁস হয়ে যাওয়া রিপোর্টে তার কিছু বর্ণনা রয়েছে।

ফাঁস হওয়া এরকম একটি দলিলে জাতিসঙ্ঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গত বছরের জুলাই মাসে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য আমদানি রফতানির ব্যাপারে যে সমঝোতা হয়েছিল তার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কার পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।

এই রিপোর্ট বলছে, গুতেরেস চুক্তিটি রক্ষার ব্যাপারে এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে তিনি রাশিয়ার স্বার্থের কথা বিবেচনা করতেও রাজি ছিলেন।

‘রাশিয়া কিম্বা ব্যক্তিবর্গের ওপর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গুতেরেস রাশিয়ার রফতানি করার সক্ষমতা আরো উন্নত করার ওপর জোর দিয়েছেন,’ বলছে রিপোর্ট।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে তার কর্মকাণ্ডের কারণে ‘ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য মস্কোকে জবাবদিহি করানোর চেষ্টা সফল হয়নি।’

বিশ্বের শীর্ষ এই কূটনীতিক মস্কোর ব্যাপারে নরম- যুক্তরাষ্ট্রের এই ধারণায় জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ফাঁস হয়ে যাওয়া এসব রিপোর্টের ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। তবে তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বের দরিদ্র লোকজনের ওপর এই যুদ্ধের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করেছে জাতিসঙ্ঘ।’

‘এর অর্থ হচ্ছে খাদ্যের মূল্য কমানোর জন্য যা যা করা সম্ভব আমরা সেসব করার চেষ্টা করেছি। যেসব দেশের সারের প্রয়োজন তারা যাতে সেটা পায় আমরা সেটা নিশ্চিত করতে চেয়েছি,’ বলেন তিনি।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রায়শই অভিযোগ করা হয় যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের শস্য ও সার রফতানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, তারা যেসব সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে সেগুলোর সমাধান করা না হলে রাশিয়া কমপক্ষে দুবার এই চুক্তি বাতিল করার হুমকিও দিয়েছে।

রাশিয়ার খাদ্যশস্য ও সার আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না, কিন্তু রাশিয়া বলছে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে জাহাজ ও বীমার ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

গুতেরেসের প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ব্যাখ্যা করছে তাতে জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তারা যে খুশি নয় সেটা স্পষ্ট। তারা বলছেন, গুতেরেস পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি রাশিয়ার এই যুদ্ধের বিরোধিতা করছেন।

ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের আরেকটি রিপোর্টে গুতেরেস ও তার ডেপুটি আমিনা মোহামেদের খোলামেলা এক আলোচনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

তাতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেয়েন ইউরোপের দেশগুলোকে আরো বেশি করে অস্ত্র ও গোলা-বারুদ উৎপাদনের আহবান জানানোর ঘটনায় গুতেরেস ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছেন।

জাতিসঙ্ঘের এই দুজন কূটনীতিক আফ্রিকান নেতাদের সাম্প্রতিক এক সম্মেলন নিয়েও কথা বলেছেন। আমিনা মোহামেদ বলেছেন, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো ‘নিষ্ঠুর’ এবং তিনি ‘তাকে বিশ্বাস করেন না’।

এটা সবাই জানে যেসব দেশ জাতিসঙ্ঘের ওপর গোয়েন্দা নজর রাখে আমেরিকা তার অন্যতম। কিন্তু এই গোয়েন্দাগিরির রিপোর্ট যখন ফাঁস হয়ে যায় সেটা বিব্রতকর হয়ে ওঠে, এবং বিশ্বের শীর্ষ কূটনীতিকের সুনাম ক্ষুণ্ণ করে।

এসব ফাইল কে ফাঁস করেছে বুধবার পর্যন্ত তা নিয়ে খুব অল্পই ধারণা ছিল কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের এক রিপোর্টে এজন্য একজন বন্দুকপ্রেমী ব্যক্তিকে দায়ী করেছে যার বয়স কুড়ির ঘরে এবং তিনি একসময় একটি সামরিক ঘাঁটিতে কাজ করতেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট বলেছে, তিনি সামাজিক মাধ্যম ডিসকর্ডের ছোট্ট একটি গ্রুপে এসব গোপন তথ্য শেয়ার করেছিলেন। এই প্ল্যাটফর্মটি গেমারদের কাছে জনপ্রিয়। এই গ্রুপে ‘বন্দুক, সামরিক সরঞ্জাম ও ঈশ্বর’ নিয়ে কথাবার্তা হয়।

এই রিপোর্টের সত্যতা বিবিসির পক্ষে যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি। ওই চ্যাট গ্রুপের দুজন সদস্যের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন পোস্টের এই রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে।

ওই গ্রুপে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন ডকুমেন্টের স্ক্রিনশট ডিসকর্ডের বিভিন্ন চ্যানেলে শেয়ার করা হয়েছে যা বিবিসি যাচাই করে দেখেছে।

বুধবার ডিসকর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তারা এই ফাঁসের তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কারবি বিবিসিকে বলেছেন, কিভাবে এসব গোপনীয় রিপোর্ট ফাঁস হয়েছে তা খুঁজে বের করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তন্ন তন্ন করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

‘এই ফাঁসের ঘটনা বেশ বিপদজ্জনক। আমরা জানি না কে এর জন্য দায়ী। আমরা জানি না কেন ফাঁস করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার ওপর এর প্রভাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখন এবিষয়ে ফৌজদারি তদন্ত চলছে,’ বলেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি

মন্তব্য করুন।

আপনার মেইল প্রকাশিত হবে না।