মারা গেছেন খাবার স্যালাইনের উদ্ভাবক দিলীপ মহলানবিশ

0 978

মারা গেছেন খাবার স্যালাইনের উদ্ভাবক দিলীপ মহলানবিশ

বহুলপ্রচলিত ওআরএসের (খাবার স্যালাইন) উদ্ভাবক ড. দিলীপ মহলানবিশ মারা গেছেন। যার তৈরি করা ফর্মুলায় আজ পর্যন্ত কোটি কোটি শিশুর প্রাণ বাঁচাতে সহায়তা করেছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় এর ব্যবহার বিশ্বব্যাপী।

গত রোববার (১৬ অক্টোবর, ২০২২ খ্রি.) সকালে কলকাতার একটি হাসপাতালে ৮৮ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। মূলত বার্ধক্যজনিত কারণেই তিনি মারা গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে ৷

বিংশ শতাব্দিতে ওআরএস একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল ৷ ৭০ এর দশকে কলেরার সময় ওআরএস বহু মানুষেরই প্রাণ রক্ষায় সহায়ক হয়ে দাড়ায় ৷ ১৯৭১-এর যুদ্ধের সময় বাংলাদেশে কলেরা থাবা বসিয়েছিল ৷ সেই সময়তেই লবন ও চিনির সংমিশ্রণ দিয়ে ওআরএস- তৈরি করেন এই বিশিষ্ট ডাক্তার দিলীপ মহলানবিশ ৷ চিনি, লবন সেই সাথে পানি দিয়ে তৈরি করা এই তরল, করেলা রোগীদের উপর প্রয়োগ করেন তিনি ৷ রোগীদের উপর মহাষৌধের মত কাজ করেছিল এই বিশেষ মিশ্রণ ৷

১৯৭১ সালে তিনি বনগাঁর বিভিন্ন ল্যাব, ওয়ার্কশপ এবং ফিল্ড ট্রায়ালগুলোতে দিন কাটাতেন ৷ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীদের ওআরএস এক কার্যকারিতা সম্পর্কে বুঝাতে বছরের পর বছর অতিবাহীত করতে হয়েছিল তাকে ৷

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হাজার হাজার গৃহহীন মানুষ ভারতীয় সীমান্তের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে স্থানান্তরিত হয়।সেই সময়ে বহু শরণার্থী কলেরায় আক্রান্ত ছিল। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও কলেরায় একের পর এক শিশুর মৃত্যু হচ্ছিল । এই সমস্ত শরণার্থীকে ওআরএস দেওয়ার পর অবিশ্বাস্য ফল পাওয়া যায় ৷

তাঁর এই মহা আবিষ্কারের পরে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১০৫টি দেশে প্রকল্পটি গ্রহণ করে এবং বিশ্বব্যাপী ওআরএস-এর ব্যবহারকে স্বীকৃতি দেয়। পরবর্তীতে, এটি জাতিসংঘ দ্বারা শতাধিক শরণার্থী শিবিরে ব্যবহৃত হয় স্যালাইনটি। এই উদ্যোগটি সফলভাবে ডায়রিয়ায় মোট মৃত্যু কমাতে সক্ষম হয়েছিল ৷

শরীর সুস্থ রাখতে বহু মানুষের বাড়িতেই এক প্যাকেট ওআরএস সব সময়তেই মজুত থাকে ৷ এর আবিষ্কারক ড. দিলীপ মহলানবিশকে বেশিরভাগ মানুষই ডাক্তারবাবু নামেই জানতেন ৷ বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ থেকে অবসর নেওয়ার পর কলকাতার সল্টলেকের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন এই বিশিষ্ট ডাক্তার ৷

তার জন্মেছিলেন অবিভক্ত বাংলার কিশোরগঞ্জে। দেশভাগের সময় পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। প্রথমে বরাহনগর, পরে শ্রীরামপুর। কাজের জন্য অসংখ্য পুরস্কার এবং সম্মান পেয়েছেন। ১৯৯১ সালে সল্টলেকে নিজের বাড়িতে ‘সোসাইটি ফর অ্যাপ্লায়েড স্টাডিজ’ তৈরি করেন— ডাক্তারি পাস করা ছেলেমেয়েদের হাতেকলমে গবেষণা এবং ফিল্ডওয়ার্ক শেখানোর উদ্যোগ। ঠিক যেভাবে তিনি চিকিৎসক হিসেবে তার জীবন শুরু করেছিলেন, সেভাবেই ছাত্র-ছাত্রীদের ডাক্তারি শেখাতে চেয়েছিলেন তিনি।

১৯৬০-এ লন্ডনে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস চালু হতে প্রচুর ডাক্তারের চাহিদা তৈরি হয়। দিলীপ মহলানবিশ আবেদন করতেই সুযোগ পান। এর পর লন্ডনে ডিসিএইচ করেন। এডিনবরা থেকে এমআরসিপিও। তার পর কুইন এলিজাবেথ হসপিটাল ফর চিল্ড্রেন-এ রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন এই বাঙালি চিকিৎসক। তখন তার বয়স তখন মাত্র ২৮। ওই পদে তিনিই প্রথম ভারতীয়।

এরপর আমেরিকায় জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির মেডিকেল কেয়ার ফেলো পদে যোগ দেন দিলীপ। তখন ওই প্রতিষ্ঠানের একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র ছিলো বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে। কলেরা আক্রান্তদের চিকিৎসা হতো সেখানে। ১৯৬৪-তে দেশে ফিরে দিলীপ সেখানে যোগ দেন। শুরু করেন ওআরএস এবং স্পেশাল মেটাবলিক স্টাডি নিয়ে গবেষণার কাজ। হাতেকলমে সাফল্য পেলেও গবেষণাপত্র বার করা হয়ে ওঠেনি।-

মন্তব্য করুন।

আপনার মেইল প্রকাশিত হবে না।