ধনেপাতা বহুগুণে গুণাম্বিত, হরেক রকম উপকারিতা রুপচর্চায়ও

অনলাইন ডেস্ক

0 536

এখন প্রতিনিয়ত বইছে শীতল হাওয়া৷ প্রকৃতিতে শীতের ছোঁয়া। শীতের হাওয়া লেগেছে সবজির বাজারেও। রংবেরঙের নানা রকম শাক সবজিতে ভরপুর এই মৌসুমে রসনাবিলাসের অন্ত নেই।

প্রধান ফসল হিসাবে চাষ করার পাশাপাশি এটি অন্যান্য ফসলের সঙ্গে মিশ্র পদ্ধতিতে চাষ করেও অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। এর বীজ যেমন মশলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তেমন এর পাতা বিভিন্ন রন্ধনে ও পদে সুগন্ধিকারক হিসাবে এবং স্যালাডেও ব্যবহার করা হয়। ধনিয়া বীজ ও পাতা ভেষজগুন সম্পন্ন, এছাড়াও ধনিয়া পাতাতে ভিটামিন-সি বিদ্যমান।

নানা কাজে ব্যবহৃত হয় এই পাতা৷ এর পাতা সবুজ আকৃতির হয়৷ ফুল সাদা রঙের হয়ে থাকে৷ এর বৈজ্ঞানিক নাম Coriandrum sativum. অনেকে বাড়িতেই চাষ (Farming at Home) করেন এই গাছ৷ কারণ এটি হতে বেশি জায়গা লাগে না৷ একটা ছোট টবেই আপনার রান্নার কাজের প্রয়োজনীয় ধনেপাতা আপনি ফলাতে পারবেন৷

ধনেপাতার প্রচুর গুণ (Benefits of Coriander) রয়েছে৷ এতে রয়েছে ১১ রকমের এসেনশিয়াল অয়েল, প্রোটিন, ভিটামিন এ, সি, কে, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ক্লোরিন, ফাইবার, ক্লোরিন প্রভৃতি৷ দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই পাতাটি৷ চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কেন আমরা ধনেপাতা ব্যবহার করব৷

রান্নায় ধনেপাতা থাকবে না তা কেমন করে হয়। ঝোল হোক বা ঝাল হোক- ধনেপাতা রান্নার স্বাদ, গন্ধ ও অবশ্যই সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। শুধু কী তাই? ধনেপাতার রয়েছে অনেকগুণ। নিয়মিতভাবে ধনেপাতা খেলে শরীর থাকবে সুস্থ।

ধনেপাতায় যে সব উপকার পাবেন

১। ধনেপাতা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ধনেপাতা চোখের অন্যান্য সমস্যাতেও সমানভাবে উপকারী একটি জিনিস।এটি নিয়মিত খেলে বাড়ে চোখের জ্যোতি। এতে থাকা ভিটামিন এ চোখের যত্ন নেয় পুরোদমে। রাতাকানা রোগীদের জন্য এই পাতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷

২। পুষ্টির জোগান দেয় এই ধনেপাতা। ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন এ, সি ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ধনেপাতা শরীরে পুষ্টি প্রদান করে থাকে।

৩। এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি উপাদান বাতের ব্যথা থেকে গাঁটের ব্যথা, বিভিন্ন ব্যথা কমাতে সাহায্য করে৷ হাড় মজবুত করতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম৷

৪। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে ধনেপাতার তুলনা নেই। ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলে। তাছাড়াও বিভিন্ন ধরনের জীবাণু এবং রোগের সঙ্গে শরীর যাতে লড়তে পারে তার জন্য শরীরকে ভিতর থেকে করে তোলে আরও মজবুত ও শক্তিশালী।

 

৫। ধনেপাতা পরিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমের সমস্যায় যারা ভুগে থাকেন তারা নিয়মিত ধনেপাতা খেলে সমস্যা থেকে মিলতে পারে মুক্তি। তাছাড়াও হজমশক্তিও বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে ধনেপাতা। সেই সঙ্গে কোষ্ঠাকাঠিন্যের সমস্যাও হ্রাস পায়৷

৬। অ্যানিমিয়ার সমস্যা থেকে স্বস্তি দিতে পারে এই ধনেপাতা। কারণ হলো ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ। যা শরীরের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে। অ্যানিমিয়া দূরীকরণেও প্রাথমিকভাবে আপনার জন্য বড় ধরণের সহায়ক হতে পারে এটি।

৭। মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের (Periods) সময় শরীর দুর্বল থাকে৷ এই পাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়৷ এর মধ্যে আয়রন রয়েছে, তাই রক্তাল্পতা সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের ধনেপাতা খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে৷

৮। এই পাতায় রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান, যা চর্মরোগের সমস্যা সমাধানে অনেকক্ষেত্রেই সাহায্য করে থাকে৷

৯। উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) কমাতে ধনেপাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এতে হৃদরোগের ঝুঁকিও হ্রাস পায়৷

১০। ধনেপাতা আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে৷ এতে বিদ্যমান উপাদান আমাদের শরীরে চর্বির পরিমাণকে কমায়৷ শরীরকে সতেজ, সচল রাখতে সহায়তা করে৷

১১। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতেও এর ভূমিকা রয়েছে৷ ধনেপাতা বাটা ত্বকের ব্রণর (Acne or Pimple) উপদ্রব কমায়, ব্ল্যাকহেডস দূর করতে সাহায্য করে৷ চর্মরোগের হাত থেকেও রক্ষা করে৷

১২। অ্যালঝাইমার সমস্যা এবং ক্যানসারকে দূরে সরিয়ে রাখতে এই পাতার ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করা হয়৷ শুধু তাই নয়, উদ্বেগ-বিষণ্ণতা কমাতেও ধনেপাতার ভূমিকা রয়েছে৷

১৩। ডায়াবিটিসে আক্রান্তদের জন্যে ধনেপাতা বিশেষ উপকারী। এটি ইনসুলিনের মাত্রা বজায় রাখে এবং রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও (Side effects of Coriander) দেখা দিতে পারে৷ আবার অ্যালার্জি থাকলে এই পাতা এড়িয়ে যাওয়ায় উচিত৷

এত গুণ থাকায় সারাবছর ধনিয়াপাতার বাজারে চাহিদা আছে। এই সময়ে বাড়িতে সহজেই কেউ ধনে পাতার চাষ করতে পারেন, এতে রাসায়নিক বিষমুক্ত ফসলও পাওয়া যায় আবার ঘরও সবুজে ভরে ওঠে।

 

রূপচর্চায় ধনে পাতা-

ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে
ধনেপাতা ভিটামিন সি’তে পরিপূর্ণ। তাই এটি ত্বককে উজ্জ্বল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, এটি কোলাজেন ও ইলাস্টিন প্রস্তুত করে ত্বককে ক্যান্সার থেকে দূরে রাখে।

যা যা লাগবে
২-৩ মুঠো ধনেপাতা, কুঁচি করা দুই টেবিল-চামচ অ্যালোভেরা জেল, দুই টেবিল-চামচ টক দই, এক টেবিল-চামচ নারিকেল, দুধ, এক টেবিল-চামচ চালের গুঁড়ো, যেকোন উপটান দুই টেবিল-চামচ

পদ্ধতি
একটি বাটিতে সবগুলো উপাদান মিশিয়ে নিন ভালো করে। এবার পুরো মুখে ভালোমতো লাগান। ১৫-২০ মিনিট কিংবা পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানি সহকারে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

ব্ল্যাকহেড দূর করতে
ব্ল্যাকহেড সাধারণত তখনই দেখা দেয় যখন ত্বকের রোমকূপে ময়লা জমে কালো রঙ ধারণ করে। ধনেপাতায় প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি ব্ল্যাকহেডের সঙ্গে লড়ে ত্বককে পরিষ্কার রাখে।

যা যা লাগবে- ধনেপাতার রস এক চা-চামচ, লেবুর রস এক চা-চামচ

পদ্ধতি
একটি ছোট বাটিতে দুটি উপাদান মেশান এবং ত্বকের যে অংশে ব্ল্যাকহেড আছে সেখানে লাগান। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ব্রণ প্রতিরোধে
ত্বকে তেল ও ময়লা জমে ব্রণের সৃষ্টি হতে পারে। সেগুলো পরিষ্কার করে ত্বককে নরম ও মোলায়েম করে তুলতে ধনেপাতার জুড়ি নেই।

যা যা লাগবে- এক মুঠো ধনেপাতা, এক চা-চামচ লেমন গ্রাস, এক চা-চামচ ক্যামোমাইল

পদ্ধতি
প্রতিটি উপাদান মিশিয়ে একটি বাটিতে নিন এবং গরম পানি ঢালুন। এক ঘণ্টা রেখে দিন এভাবে। অতঃপর বাটির মিশ্রণ ভালোমতো ব্লেন্ড করুন। মুখে ভালোমতো লাগান এবং বিশ মিনিট রেখে দিন। এরপর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.