পোরশায় ভাংচুরকৃত মন্দির পরিদর্শন ও আলোচনা সভা

0 174

৩ নভেম্বর ২০২১ নওগাঁর পোরশা উপজেলার মুর্শিদপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর এবং শরিয়ালা গ্রামের ভাংচুরকৃত ৫টি মন্দির পরিদর্শন করেন পত্নীতলা উপজেলা ইয়ূথ ফোরাম, ধর্মীয় নেতাদের ফোরাম এবং পিস প্রেসার গ্রুপের নেতৃবৃন্দ্ব। এসময় তারা শরিয়ালা গ্রামের মন্দিরগুলো পরিদর্শন করে গ্রামবাসিদের সাথে সভা করেন এবং তাদের মনোবল সুদৃঢ় করতে পাশে থাকার কথা বলেন।

ভবানীপুর গ্রামের মন্দিরগুলো পরিদর্শনকালে কালি মন্দিরের সামনে সমবেত মানুষদের সাথেও অনুরুপ সভা করেন এবং দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এসময় পত্নীতলা উপজেলা ইয়ূথ ফোরামের সভাপতি মোস্তাকিম বিল্লাহ, সহ-সভাপতি তসিবা পারভীন নিশি, সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার শাকিল, ফোরামের নির্বাহী সদস্য দিনেশ নোনার, আজাদ হোসেন, আনন্দ পাহান, দিপু কুমার, সুবোধ রবিদাস টিমের সাথে ছিলেন। নিরমইল ইউনিয়ন ধর্মীয় নেতাদের ফোরামের সহসভাপতি রমেন চন্দ্র বর্মন অভিলাশ, আতাউর রহমান, দিবর ইউনিয়ন ফোরামের সভাপতি ও বাঁকরইল বহুমূখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাসেদ আলী, রামরামপুর মন্দিরের পুরোহিত জীবন ঠাকুর, কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ফোরামের সভাপতি হুমায়ূন ইসলাম চৌধুরী, ইসাহাক আলী, পত্নীতলা ফোরামের সভাপতি ও পত্নীতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মজনুর রহমান, আমাইড় ফোরামের সদস্য হাবিবুর রহমান, ঘোষনগর ফোরামের সদস্য ফরহাদ হোসেন, সুলতান মাহমুদ, দি হাঙ্গার প্রজেক্টের ইউনিয়ন এবং এলাকা সমন্বয়কারী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাইদুর রহমান মোল্লাপ্রমূখ।

টিমের সদস্যরা ভবানীপুর এবং শরিয়ালা গ্রামের নারী পুরুষ এবং শিশুদের নিকট থেকে মন্দির ভাংচুরের বিষয়ে সার্বিক খোঁজ খবর নেন। এলাকার মানুষও তাদের ভীতিকর অবস্থার কথা টিমের সাথে শেয়ার করেন। মনষা মন্দির প্রতিষ্ঠাকারী প্রমিলা রাণী বলেন -”গত ১ নভেম্বর ২০২১ গভীর রাতে কে বা কারা মন্দিরের প্রতীমাগুলো ভাংচুর করেছে। আমরা সকালে মন্দিরে গিয়ে সেগুলো প্রত্যক্ষ করেছি। আমার ১৯ বছরের বিবাহিত জীবনে কখনও উস্কানী বা ভাংচুরের ঘটনা এখানে দেখি নাই। আমরা নিরাপদেই ছিলাম কিন্তু কেন এমন হলো জানি না। প্রশাসন থেকে ভাঙ্গা প্রতিমাগুলো বিসর্জন দিতে বললে আমরা দ্রুত সেগুলো বিসর্জন দিয়েছি। আমাদের মনে ভয় করছে, দেশের বিভিন্ন জায়গার মতো যেন আমাদের উপর জুলুম করা না হয় সেদিকে আপনারা দৃষ্টি দেবেন।”

শরিয়ালা গ্রামের পুজারী ও আওয়ামী লীগ নেতা অরুণ চন্দ্র বর্মন বলেন -”সকালে আমরা ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রতিমাগুলো ভাংচুর করা হয়েছে। প্রশাসন এবং আমাদের মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নিকট ঘটনাটি জানানো হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসকের পক্ষে আমাদের নির্ভয়ে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

শরিয়ালা গ্রামের সমাজসেবক এবং আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান মোল্লা বলেন -”আমার পঞ্চাশ বছর বয়সে এখানে এরকম ঘটনা ঘটেনি। কে বা কারা এলাকাকে অস্থিতিশীল করতে প্রতিমাগুলো ভাংচুর করেছে তা আমরা কেউ জানি না। আমাদের শান্তি ও সম্প্রীতিতে যে ফাঁটল ধরেছে তার বলি মন্দির ও প্রতিমাকে হতে হবে তা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলবো দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আজকে আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মানুষকে সম্প্রীতির আহবানে সভা করছি। যাতে করে পরিস্থিতি শান্ত থাকে। আশা করছি দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে।”

এদিকে ভবানীপুর গ্রামের কালি মন্দিরে আগামিকাল কালি পূঁজা উৎযাপনের নিমিত্তে প্রতিমা গড়া হয়েছিল। থানে প্রতিমা নেওয়ার পূর্বেই তা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ভবানীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকের বটতলায় কালি মন্দির পরিদর্শন করে দুরবস্থার চিত্র দেখা গেছে। মন্দিরের দায়িত্বে ছিলেন মুকুল বর্মন। তিনি বলেন -”আমার জীবদ্দশায় এরকম ভয়াবহ দৃশ্য কোনদিন দেখি নাই। শুধু প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলা হয়নি। ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে আমাদের মনোবল। সংখ্যালঘু বলে আমাদের উপর এমন নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। প্রকৃত দোষীদের বিচার হতে দেখি নাই। বিচারহীনতার সংস্কৃতিই আমাদের কালি পূঁজা থেকে দুরে সরিয়ে রাখবে। পূঁজা না করেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আর কাউকে যেন হতে না হয়।”

ভবানীপুর গ্রামের আদিবাসি নারী লতা ওরাঁও বলেন -”কি ক্ষতি করেছিল মা কালি ? হাত পা ভেঙ্গে রেখে দিয়েছে। পুলিশ এসে বিসর্জন দিতে বলেছে। আমরা পুকুরে প্রতিমাকে বিসর্জন দিলাম। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার চাই।” ভবানীপুর উত্তরপাড়ার নয়ন কুমার বলেন-”আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রতিমা ভাংচুরের মধ্যদিয়ে আমাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। আমরা আতংকে আছি। কি যেন কি হয়। তাই সরকারের নিকট আমাদের নিরাপত্তা দাবি করছি।”

অশুভ শক্তির বিনাশ করতে সনাতন ধর্মের অনুসারিরা আগামিকাল উৎসবমূখর পরিবেশে কালি পুঁজা উদযাপন করবে। ঠিক তার ৩দিন পূর্বেই প্রতিমা ভাংচুর করে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কি জানান দিতে চাচ্ছে দুবৃত্তরা। এটি কে করেছে তা আমরা কেউ জানি না। তবে এটা বলতে পারি ধারাবাহিকভাবে ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত প্রকৃত ব্যক্তি কোনদিনই সামনে আসে নাই। তাইতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে সে অশুভ শক্তি বার বার ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। সরকারের নিকট নিরাপত্তা এবং প্রকৃত দোষীদের বিচার চেয়েছেন শরিয়ালা ও ভবানীপুরের আপামর জনসাধারণ। আমরা আশাবদি দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।

মোঃ আছির উদ্দিন, নওগাঁ (ফেসবুক পেজ হতে)

মন্তব্য করুন।

আপনার মেইল প্রকাশিত হবে না।